সিলেট ঐতিহাসিক ভাবেই আলাদা ভাষা এবং আলাদা সংস্কৃতি ধারণ ও লালন করে আসছে। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বসবাস যার ফলে ভাষার ক্ষেত্রেও রয়েছে বৈচিত্র্য । পূর্বে সিলেট আসাম রাজ্যের অন্তর্গত থাকার ফলে সিলেটের ভাষা ও সংস্কৃতিতে আসামের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও সিলেটের রয়েছে এক বৈচিত্র্যময় নিজস্ব বর্ণমালা।
ভাষা ও সংস্কৃতিঃএ অঞ্চলের মানুষ মূলত: ‘সিলেটি’ আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। ‘সিলেটি’ ভাষাটি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ‘আসাম’রাজ্যের ‘অসমিয়া’ এবং ‘নাগরী’ এ দুটি স্থানীয় ভাষা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এ ভাষা সমগ্র সিলেট বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার জেলার সর্বত্র ব্যাপকভাবে প্রচলিত।
ইতিহাসবিদগণের ধারণা, প্রাচীন বৌদ্ধ এবং হিন্দু সংস্কৃতি যুগপৎভাবে সিলেট অঞ্চলের সংস্কৃতির ভিত রচনা করেছে। পরবর্তীতে বিখ্যাত মুসলমান সাধক ও আউলিয়া হযরত শাহজালাল(রহ) সুদুর ইয়েমেন(আরব দেশ) থেকে সিলেটে আগমন করলে মুসলিম সংস্কৃতি দ্রুত বিকাশ লাভ করতে থাকে। জানা যায় হযরত শাহজালাল(রহ) ৩৬০ জন সুফী সঙ্গী সহ পদব্রজে সিলেটে আসেন এবং তৎকালীন অত্যাচারী হিন্দু রাজা গৌরগোবিন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তার নিপীড়নমূলক বিশেষতঃ মুসলিম বিদ্বেষী অপশাসনের চির-অবসান ঘটান। তাঁর এ অভিযানের ফলে রাজা গৌরগোবিন্দের স্বেচ্ছাচারী দূঃশাসন অপসৃত হয়ে জনকল্যাণমূলক সু-শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের জনমানুষের মধ্যে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল ধর্মের সকল মানুষের স্বাধীন ধর্মাচার, শান্তি ও মর্যাদাপূর্ণ সহাবস্থানের এক অনন্য সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। প্রজাহিতৈষী সুশাসন ও স্বাধীন নির্বিঘ্ন ধর্মাচার প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য হযরত শাহজালাল(রহ) মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলের কাছে পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তির পাত্র হয়ে আছেন।
এখানকার লোকজ সংস্কৃতিতে আঞ্চলিক সঙ্গীত এবং সামাজিক প্রদর্শনী ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানাদির ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। এসবের মধ্যে গাটু গান, সারি গান, মরমী গান, বাউল গান, যাত্রা গান, মালজোড়া গান, বিয়ার গান, হাছন রাজার গান, শাহ আব্দুল করিমের গান, দূর্বীনশাহ’র গান ইত্যাদি স্থানীয় নামে পরিচিত আরো অনেক গান উল্লেখযোগ্য। সামাজিক বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানাদির মধ্যে নৌকা-বাইচ, ঘোড়দৌড়, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, গ্রাম্য মেলা ইত্যাদি এ অঞ্চলের সংস্কৃতিকে বিপুলভাবে সমৃদ্ধ করেছে। এ ছাড়াও সিলেটের মানুষ ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতার প্রতি গভীর বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা পোষন করে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস